Tuesday, January 31, 2023

প্রশ্নঃ বেগুন সংগ্রহ ও ফলন আলোচনা করুন?

উত্তরঃ খাওয়ার উপযোগী বেগুন সংগ্রহের সময় সাবধানে সংগ্রহ করতে হবে। সম্পূর্ণ পরিপক্ক হওয়ার আগেই সংগ্রহ করতে হয়। সাধারণত ফুল ফোটার পর থেকে ফল পেতে ১ মাস সময় লাগে। লক্ষে রাখতে হবে গাছে যেন আঘাত না লাগে। জাত ভেদে হেক্টর প্রতি ১৫ হইতে ৬০ টন ফলন পাওয়া সম্ভব। আমাদের দেশের কৃষক গণ যদি সঠিক নিয়মে বেগুন চাষ পদ্ধতি জেনে বুঝে চাষ করে তাহলে তারা কোন লোকশান এর আয়তাই আসবেনা বরং বহুগুন লাভবান হবে।

প্রশ্নঃ বেগুন গাছের গোড়া পচাঁ রোগের লক্ষন ও প্রতিকার আলোাচনা করুন।

উত্তরঃ আমাদের দেশের চাষীদের জন্য একটি বড় সমস্যা হলো বেগুন গাছের গোড়া পচে যাওয়া ও গাছ মড়ে যাওয়া। এই রোগের কারণে চাষীদের অনেক সময় ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। সস্কেলোরোসিয়াম রফসি নামক ছত্রাকের আক্রমন কারনে বেগুন গাছে এ রোগ হইয়া থাকে এবং এই রোগটি যে কোন বয়সের গাছে হইয়া থাকে। ****প্রতিকার বা রক্ষা আলোচনা করা হইল- জমির সকল গাছগুলোকে মেনকোজেব ও কার্বেনডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশকসঠিক নিয়মে প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম মিশিয়ে বেগুন গাছে স্প্রে করলে এ রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। কোন সময় বাগানে আক্রান্ত গাছ দেখা গেলে দেরি না করে সাথে সাথে আক্রান্ত গাছ উঠিয়ে দুরবতী স্থানে মাটির নিচে পুতে ফেলতে হবে। বেগুন চাষ পদ্ধতির উপর ধারনা থাকলে সহজেই উপকার পাওয়া যায়।

প্রশ্নঃ বেগুনের ফল ও কাণ্ড পচাঁ রোগের লক্ষন ও প্রতিকার কি আলোচনা করুন।

উত্তরঃ জানা মতে ফোমপসিস ভেক্সান্স নামক এক প্রকার ছত্রকের আক্রমণে ফল ও কাণ্ড পচাঁ রোগ হয়ে থাকে। এ রোগটি বীজ, আক্রান্ত গাছের পরিত্যক্ত অংশ এবং মাটির মাধ্যমে সংক্রমিত হয়। কোন কোন সময় গাছে পুষ্টির অভাব দেখা দেয় ফলে এ রোগ বেড়ে যায়।আর্দ্র আবহাওয়া এবং অধিক তাপমাত্রার কারনে এ রোগ দ্রুত বৃদ্ধিপায় এবং বেগুন ফসলের প্রচুর ক্ষতি হয়।সাধারণত নীচের পাতায় প্রথমে দাগ দেখা যায় এবং দাগগুলো স্পষ্ট গোলাকার ও ধুসর বাদামী রং ধারণ করে। মাটির উপরি ভাগের কান্ড হঠাৎ করে সরু হয়ে যায়। দাগগুলোর বয়স হলে অনেক কালো কালো দেখা যায়। যে পাতা গুলো বেশি আক্রান্ত হয় সেগুলো হলুদ হয়ে ঝরে পড়ে। মাঝে মাঝে গাছের বাকল খসে পড়ে এবং ভিতরের কাঠ বেরিয়ে পড়ে। আক্রান্ত বেগুন গুলোতে ফ্যাকাশে বসানো দাগ পড়ে এবং আক্রান্ত স্থানে বাদামী ক্ষতের সৃষ্টি হয়। আক্রান্ত ফল খুব দ্রুত পচে যায় এবং এক পর্যায়ে বেগুন গাছ মরে যায়। ****প্রতিকার বা রক্ষা আলোচনা করা হইল- সবসময় সুস্থ ও নীরোগ বেগুন থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।যে সকল বীজ কুচকানো ও কালো সে বীজগুলো ব্যবহার করা উচিত নয়।এই ছত্রাকটি আক্রান্ত গাছের পরিত্যাক্ত অংশে বছরের পর বছর বেচেঁ থাকে। তাই আক্রান্ত গাছ ও পাতা পুড়িয়ে ধ্বংস করতে হবে।কার্বেন্ডাজিম (অটোস্টিন) প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম ভালোভাবে মিশিয়ে ৭দিন পরপর জমির সকল গাছে ২বার স্প্রে করতে হবে।

প্রশ্নঃ বেগুনের ঢলে পড়া রোগের লক্ষন ও দমন আলোচনা করুন?

উত্তরঃ বেগুন গাছে ঢলে পড়া রোগের লক্ষন দেখাদেয় যখন বেগুন গাছে ফুল ও ফল ধরে। গাছের ঢলে পড়া ডগার মধ্যে কোন ধরণের পোকা পাওয়া যায় না। মাটিতে পর্যাপ্ত রস থাকার পরও গাছের ডগা ঝিমিয়ে ঢলে পড়ে ও শুকিয়ে মারা যায়। যে জমিতে বেশি পরিমাণে অম্ল থাকে সেই জমিতে বেগুন চাষ করলে এই রোগের আক্রমন হয়। ঢলে পড়া রোগে আক্রান্ত জমিতে পরের বছর বেগুন চাষ না করাই উত্তম। পরবর্তী বছর ভূট্রার চাষ করা উত্তম। তাছাড়া বেগুন চাষ পদ্ধতি জেনে বুঝে করা দরকার।ঢলে পড়া রোগ থেকে গাছকে বাঁচানোর জন্য যে কাজগুলো করা সবথেকে বেশি গুরুত্বর্পূন সেগুলো নিচে উল্লেখ করা হলোঃ- কার্বেন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক দ্বারা বীজ/চারা শোধন করে নিতে হবে।আক্রান্ত গাছ ও ঝড়ে পড়া পচা পাতাগুলো মাটিতে পুতে রাখতে হবে।বয়স্ক পাতাগুলো ছিড়ে ফেলতে হবে।এক লিটার পানি নিন সাথে ২ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি অথবা ব্যভিস্টিন এবার গাছগুলোকে রোপণের আগে উক্ত মিশ্রনে গোড়া ভিজিয়ে নিতে হবে।ক্ষেতের গাছ আক্রান্ত হলে আগের মতো এক লিটার পানিতে ১ গ্রাম টিমসেন বা ২ গ্রাম ব্যভিস্টিনের মিশ্রন দিয়ে স্প্রে করতে হবে।প্রতি ১০ দিন পরপর ২-৩ বার ৩ গ্রাম ডাইথেন এম ৪৫ অথবা ২ গ্রাম ব্যভিস্টিনের মিশ্রন দিয়ে স্প্রে কেরে দিতে হবে।ঢলে পড়া রোগ প্রতিরোধক জাত লাগাতে হবে।

প্রশ্নঃ বেগুন চাষের উপযোগী মাটি ও জলবায়ু এবংরোপন পদ্ধতি।

উত্তরঃ আমাদের দেশের বেলে দোআঁশ বা ভারী এঁটেল মাটি সহ প্রায় সব ধরনের মাটিতেই বেগুন চাষ করা হয়। বেগুন সাধারণত ২০ থেকে ৩০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ভাল ফলন হয়। তাপমাত্রা কমবেশি হলে বেগুনের ফুল ও ফল ধারণ ব্যাহত হয়। ব শীতকালীন জলবায়ু বেগুন চাষের জন্য খুবই উপযোগী। বেগুন চাষের জন্য উর্বর জমি হতে হবে ।আমাদের দেশে প্রায় সব মাটিতে বেগুন চাষ কর হয়ে থাকে।, দো-আঁশ, এটেল দো-আঁশ ও পলি মাটিতে বেগুনের ফলন খূব ভালো হইয়া থাকে । যযে সকল জমিতে বৃষ্টির পানি জমে থাকে না এমন জমি নির্বাচন করে বেচে নিতে হবে। জমি তৈরি করার জন্য প্রায় ৬বার চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করিয়া উপযুক্ত করিয়া তুলিতে হবে।পরিমান মত সার ও কিট নাষক দিয়া জমি ভালো ভাবে চাষ করার পরে বেগুনের জাত ভেদে বেড প্রস্তুত করতে হবে। চারার বয়স যখন ৩৫-৪৫ দিন হইলে চারা তুলিয়া রোপন করিতে হবে। চারা রোপন করার পর কয়েক দিন অল্প অল্প করিয়া চারায় পানি দিতে হবে না হইলে চারা মরিয়া যাইবে।হয়। চারা লাগানের সঠিক সময় বিকালের সময়। বেগুনের জন্য ৭৫ সে.মি থেকে ৯০ সে.মি দুরে সারি করে ৫০-৬০ সে.মি দুরে দুরে চারা লাগাইতে হবে।

প্রশ্নঃ বেগুনের জাত সমুহ আলোচনা করুন।

উত্তরঃ বেগুনের জাত সমুহ আলোচনা করা হইল- আমাদের দেশে সারা বছর বেগুন চাষ করা হলেও সব জাতগুলো সব সময় চাষ করা যায় না। দেশের বিভিন্ন জেলাগুলোতে স্থানীয় ফসল হিসাবে বিভিন্ন জাতের বেগুন চাষ করা হয়। ভাল ফলন পেতে হলে ভাল মানের জাত র্নিবাচন করা দরকার। মৌসুম ভিত্তিতে সব জাত গুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা হয় যেমন– শীতকালীন জাত ও বারমাসী জাত। শীতকালীন জাতের বেগুন কেবল মাত্র রবি মৌসুমেই চাষ করা হয়ে থাকে কারণ এ জাতের বেগুন শুধু মাত্র রবি মৌসুমেই ফল দিয়ে থাকে। আর বারমাসী জাতের বেগুন সারা বছরই চাষ করা যায়। ****স্থানীয় জাত বেগুন গুলো হইল- তাল বা তল্লা বেগুন, কেজি বেগুন ইসলামপুরী, উত্তরা, লাফফা, নয়নকাজল, রাখাইন বেগুন, খটখটিয়া, সাহেব বেগুন, উত্তরা, লাফফা, নয়নকাজল, ইত্যাদি জাত বলে লোকজন বলে থাকে। ****হাইব্রিড বেগুন জাতগুলো হইল- হাইব্রিড বেগুন নয়নতারা (বারি বেগুন ৫), চমক এফ১, বিটি বেগুন,বিজয়, পার্পল কিং, কাজলা (বারি বেগুন ৪), তারাপুরী (বারি বেগুন ২), শুকতারা, ডিম বেগুন, পার্পল কিং, মুক্তকেশী ইত্যাদি জাত আছে।

প্রশ্নঃ বেগুন চাষ

উত্তরঃ বাংলাদেশেরে সকল জেলাই কমবেশি বেগুনের চাষ করা করা হয়। আমাদের দেশের অনেক কৃষকের বেগুন চাষ পদ্ধতি অভিঙ্গতা কম। প্রায় সারা বছরে আমাদের দেশে বেগন চাষ করা হয়। আর এই কারনে আমাদের দেশে সব সময় বাজারে বেগন পাওয়া যায়। বেগুনের গাছ প্রায় ৩৫ থেকে ১৪০০ সেমি লম্বা হইয়া থাকে। সঠিক নিয়মে চাষ না করার জন্য অনেক কৃষকরা লোকসান করে থাকেন। তার কারনে তারা বেগুন চাষে অনিহা প্রকাশ করে থাকে। আমরা বেগুন সবজি হিসাবে খেয়ে থাকি, বেগুন পুষ্টিকর ও সুস্বাদু সবজি। বেগুন মাঠে ও চাষ করা যায় আবার বাড়ীর ছাদেও চাষ করা যায়। বাড়ীর ছাদে টবে অথবা প্লাস্টিকের বস্তার ভিতরে মাটি দিয়ে বেগুনের চারা লাগাইয়া েখুব ভালোভাবে বেগুন চাষ করা যায়। তবে বাড়ীর ছাদে বেগুন চাষ করিয়া রিবারের সবজির অভাব দুর করা যায়। তবে বাড়ীর ছাদে বেগুন লাগাইলে দুই একদিন পর পর পানি দিতে হবে না হইলে বেগুনের গাছ পানির অভাবে শুকিয়ে যাবে।

Friday, January 20, 2023

ছাদে কিভাবে বেগুন চাষ করা যায়

ছাদের উপরে টবে বেগুনের চাড়া লাগাইয়া বাে ছাদে প্লাস্টিকের বস্তার ভিখতরে বেগুনের চাড়া লাগাইয়া ও বেগুন চাষ করা যায়। ADS

প্রশ্নঃ ছাদ বাগানে কি কি গাছ লাগানো যাায় আলোচনা করুন?

উত্তরঃ ছাদে বাগান করার সময় আমাদের লক্ষ রাখিতে হইবে যে, গাছটি যেন কোন ভাবেই বড় রকমের না হয়। সেইজন্য ছোট আকারের গাছ লাগাতে হবে এবং ছোট আকারের গাছে যেন বেশি ফল ধরে সেই জন্য হাইব্রিড জাতের ফলদ গাছ লাগাইতে হবে। জলপাই, করমচা, শরিফা, আম, পেয়ারা, আপেল কুল, ডালিম, পেঁপে আতা, আমড়া, লেবু, এমনকি কলা গাছও লাগানো যাবে। ছাদ গাছ বাগানের প্রথম শর্ত হচ্ছে, গাছ বাছাই। জেনে, বুঝে, ভালো নার্সারি থেকে গাছ সংগ্রহ করে নিতে হবে। অতি ছোট বা বেঁটে প্রজাতির অতিদ্রুত বর্ধনশীল ও ফল প্রদানকারী গাছ হলো ছাদ বাগানের জন্য উত্তম গাছ। ছাদে বীজের চারা লাগানো যাবেনা সেইজন্য কলমের চারা লাগালে অতিদ্রুত ফল পাওয়া যায়। আজকাল বিভিন্ন ফলের গুটি কলম, চোখ কলম ও জোড় কলম পাওয়া যাচ্ছে। ছাদ বাগানের জন্য এইসব কলমের চারা সংগ্রহ করে লাগালে ভালো হবে। টবে আলফানসো, বেঁটে প্রজাতির বারোমেসে, লতা, ফিলিপাইনের সুপার সুইট, রাঙ্গু আই আম্রপালি আম চাষ করা যাইতে পারে। মালটা, নারকেলি লেবু, লেবুর মধ্যে কাগজিলেবু, কমলা, , কামকোয়াট, বাতাবিলেবু (অ্যাসেম্বল), ইরানিলেবু, টবে খুবই ভালো হয়। ইহা ছাড়া বাউকুল, আপেলকুল, নারিকেলকুল, লিচু, থাইল্যান্ডের মিষ্টি জলপাই, কলমের শরিফা, কলমের কদবেল, কলমের জলপাই, ডালিম, স্ট্রবেরি, থাইল্যান্ডের লাল জামরুল, গ্রিন ড্রপ জামরুল, আপেল জামরুল, আঙ্গুর পেয়ারা, থাই পেয়ারা, ফলসা, খুদে জাম, আঁশফল, জোড় কলমের কামরাঙা, এমনকি ক্যারালা ড্রফ প্রজাতির নারিকেলের চাষ করা যেতে পারে। সঠিক জাতের চারা হলে এক বছরের মধ্যেই ফল আসে। আজকাল বিদেশ থেকে উন্নত মানের কিছু চারা কলম সংগ্রহ করে লাগাতে পারেন। পেয়ারা, সফেদা, বাহারি পাতার জামরুল গাছ এবং বিভিন্ন নার্সারিতে এগুলো এখন কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। এসব গাছ ছাদে বাগানে লাগানো হইলে ছাদ বাগানের সৌন্দার্য বহুগুন বৃদ্ধি পাবে।